Wednesday, December 31, 2014

ধর্মে কথা বলার বিধান সম্পর্কিত কিছু তথ্য-

জিহ্বা আকারে একটি ক্ষুদ্র মাংশপিন্ড হইলেও ইহা আল্লাহ পাকের এক বিরাট নেয়ামত এবং তাঁহার সূক্ষ অর্থাৎ, ঈমান-এবাদত, আনুগত্য ও এতায়াতের ক্ষেত্রে এই জিহ্বার ভূমিকা যেমন ব্যাপক, তদ্রুপ অনাচার-অনাসৃষ্টি ও পাপাচারের ক্ষেত্রেও এই জিহ্বার ভূমিকা সর্বাধিক ।
জিহ্বার ক্ষতির পরিধি ব্যাপক- বিস্তৃত এবং উহার পরিনতিও বড় ভয়াবহ । ইহা হইতে আত্নরক্ষার একমাত্র উপায় হইল নীরব থাকা । এই কারনেই শরীয়তে নীরব থাকার প্রশংসা করিয়া উহার প্রতি উৎসাহিত করা হইয়াছে ।
রাসুল পাক সাঃ এরশাদ করেছেন-”যে নিরব থাকে সে মুক্তি পায়।” -[তিরমিযি]
অন্য রেওয়াতে আছে,রাসুল পাক সাঃ এরশাদ করেছেন- ”নিরব থাকা হল হেকমত ও প্রজ্ঞা, (কিন্তু) কম লোকই উহার উপর আমল করে।”
একজন সাহাবী রাসুল (সাঃ), এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেনঃ- "ইসলাম সম্পর্কে আমাকে এমন কোন কথা বলে দিন যেন আপনার পরে আর কাহারও নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়, আমার এ নিবেদনের জবেবে তিনি এরশাদ করলেনঃ-"বল, আল্লাহর উপর ইমান আনিলাম, অতপর এই ইমানের উপর কায়েম থাক,আমি আরজ করিলাম হে আল্লাহর রসুল আমি কোন বিষয় হতে বাচিয়া থাকিব ? জবাবে তিনি জিহ্বার দিকে ইশারা করে বললেন,ইহা হতে বেচে থাক।"-[তিরমিযি,নাসাঈ,ইবনে মাজা,মুসলিম]
আরও একজন সাহাবী রাসুল (সাঃ), এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেনঃ-'নাজাতের উপায় কি ?' রাসুল (সাঃ) এরশাদ করলেন,"জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রনে রাখ,তোমার ঘর যেন তোমার জন্য যথেষ্ট হয়(অর্থাৎ ঘর হতে বের হয়ো না) এবং নিজের গুনাহের জন্য (অনুশোচনার) অশ্রু বর্ষন কর।"-[তিরমিযি]

আল্লাহর হাবিব সাঃ এরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি আমাকে উভয় কানের মধ্যখানের বস্তু(অর্থাৎ জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্য স্হানের বস্তু অর্থাৎ লজ্জাস্হানের নিশ্চয়তা দিবে,আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব।"- [বোখারী]

অন্য হাদিসে আছে, "যে ব্যক্তি নিজের উদর, লজ্জাস্হান ও জিহ্বার ক্ষতি হতে বেচে থাকে,সেই ব্যক্তি সর্বাধিক অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে।” কেননা, মানুষ ব্যপকভাবে এই তিনটি অঙ্গের খায়েসের কারনেই বিপদগামী হয়ে থাকে।"
একবার নবী করিম সাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন বিষয়ের কারনে মানুষ অধিক পরিমানে জান্নাতে যাবে ? জবাবে রাসুল (সাঃ) এরশাদ করলেন- "আল্লাহর ভয় ও সচ্চরিত্রতার কারনে।" পুনরায় আরজ করা হলো, সেই বিষয়টিও বলে দিন 'যার কারনে মানুষ জাহান্নামে যাবে' এরশাদ হলো –"দুটি খালি বস্তুর কারনে- মুখ ও ল্জ্জাস্হান।"-[তিরমিযি,ইবনে মাজা]

হযরত মোয়ায বিন জাবাল রাঃ রাসুল পাক সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন, 'সর্বোত্তম আমল কোনটি ?' জবাবে রসুল পাক সাঃ নিজের জিহ্বা মোবারক বের করে উহার উপর আঙ্গুল স্হাপন করলেন(অর্থাৎ নিরব থাকা সর্বোত্তম আমল) [তাবরানী]

হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ হতে বর্নীত,রাসুলে পাক সাঃ এরশাদ করেন,"বান্দার ইমান ততক্ষন পর্যন্ত ঠিক হয় না,যতক্ষন তাহার ক্বলব ঠিক না হয়,বান্দার ক্বলব ততক্ষন ঠিক হয় না,যতক্ষন তাহার জিহ্বা ঠিক না হয়,আর সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না,যার ক্ষতি হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নহে।"

রাসুল পাক সাঃ এরশাদ করেছেন,"দেহের প্রতিটি অঙ্গই আল্লাহপাকের নিকট জিহ্বার ক্ষিপ্রতা সম্পর্কে অভিযোগ করে।"
একদা হযরত মোয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন, ”হে আল্লাহর রাসূল (সা:) আমাকে কিছু ওসীয়ত করুন । হযরত মোয়াজের নিবেদনের জবাবে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন: ”তুমি এমনভাবেআল্লাহ পাকের এবাদত কর যেন আল্লাহকে দেখছ । নিজের নফসকে মৃতদের মধ্যে গন্য কর । তুমি যদি চাও,তবে আমি তোমাকে এমন বিযয় বলবো যা এই সমুদয় বিষয় আপেক্ষা উত্তম ; তিনি হাত দ্বারা নিজের জিহ্বার দিকে ইশারা করলেন ।” [তাবরানী]

হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন, আমার নিকট নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বানী নকল করা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক সেই ব্যক্তির উপর রহম করুন যে কথা বলিলে উপকারী কথা বলে এবং নীরবতা দ্বারা নিরাপত্তা লাভ করে ।(বায়হাকী)

এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আ:)- এর খেদমতে আরজ করল; ”আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন, যা দ্বারা আমি বেহেশ্ত লাভ করতে পারব । তিনি বললেন, তুমি কখনো কথা বলিও না । লোকটি আরজ করলো, ইহা তো সম্ভব নহে । তিনি বললেন, তুমি ভাল কথা ব্যতীত অন্য কিছু বলিও না ।”

হযরত সুলাইমান (আ:) বলেন,(মনে কর) কথা বলা যদি রুপা হয়,তবে চুপ থাকা যেন স্বর্ণ ।”

এক বেদুঈন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলো, আমাকে এমন কোন আমল বলে দিন যা দ্বারা আমি জান্নাত লাভ করতে পারবো ।আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন: অভুক্তকে আহার করাও, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, সৎকাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজ হইতে নিষেধ কর । তুমি যদি এইরুপ করতে না পার, তবে ভাল কথা ব্যতীত অন্য কোন কথা বলিও না ।

ইমাম গাযযালী (র:)-এর কিছু মূল্যবাণ উপদেশাবলী:-

নিজেকে বড় মনে করা অত্যন্ত জঘন্য পাপ। আত্ম অহংকার দ্বারা প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ্ তায়ালার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করা হয়। কেননা, বড়ত্ব একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার প্রাপ্য।
যে পর্যন্ত তুমি নিজের চোখকে হারাম বস্তর প্রতি দৃষ্টিপাত হইতে বিরত করিতে না পারিবে, সে পর্যন্ত গুনাহ হইতে আত্মরক্ষা করিতে পারিবেনা।
অন্তরের মধ্যে লুক্বায়িত নোংরামি তিনটি উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পাইয়া থাকে। ১. অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ২. রিয়া বা লোক দেখানোর প্রবণতা এবং ৩. নিজেকে বড় মনে করা।
নিজের চিন্তা, মতামত এবং কাজকর্মকে সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং অন্যের সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করার নামই আত্মপ্রশস্তি। এটি একটি মারাত্মক চারিত্রিক রোগ।
সদুপদেশ গ্রহণ করার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি না হওয়া এবং নিজের অভিমত খন্ডিত হইতে দেখিলেই অন্তরে ক্রোধের সৃষ্টি হওয়ার নামই অহংকার, আত্মপ্রশস্তি এবং অহংকার এমন মারাত্মক রোগ যা মানুষকে ধ্বংস করে ফেলে।
“ইলমে দ্বীন” সেই ইলমের নাম যে ইলম মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালার ভয় জাগ্রত করে; দুনিয়ার লোভ লালসা হইতে দূরে সরাইয়া দ্বীনের কাজে উৎসাহী করিয়া তুলে এবং অন্যায় অনাচার হইতে দূরে সরাইয়া রাখে।
জিহ্বা একটি নরম অঙ্গ। তাতে হাড় নাই। যদি বচন নরম হয় তবেই জিহ্বার স্বার্থকতা, অন্যথায় জিহ্বাই সকল অনর্থের উদ্যক্তা হইয়া দাঁড়ায়।
ইবাদতে কঠিন রাস্তা পরিহার করিয়া মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং যা কিছু কর নিয়মিত চেষ্টা কর।
আল্লাহ্ তায়ালার স্মরণে ব্যস্ত জিহ্বা, আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ অন্তর এবং সচ্চিরত্রা স্ত্রী দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ।
আল্লাহ্ তায়ালার নিকট যদি দুআ কবুল করাইতে চাও, তবে হালাল ব্যতীত অন্য কোন কিছু পেটে দিও না।


লিখেছেন- আল-আমিন হোসেইন।
অনুবাদ করেছেন- মাওলানা মহিউদ্দীন খান সাহেব।
সূত্র- · Spiritual saint (আধ্যাত্মিক সাধু-সন্ন্যাসী)

শরীয়ত ও তরিকত

প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত ইহতে তরিকতকে এবং তরিকত ইহতে শরীয়তকে পৃথক জানাই পাপ এবং মারেফাত ব্যতীত কোনো এবাদতই হইতে পারে না । শরীয়ত দেহ,তরিকত তাহার প্রাণ। প্রাণ ব্যতীত দেহ যেমন অচল ও অকর্মণ্য,সেইরুপ তরিকত ব্যতীত শরীয়তও অচল,অসম্পূর্ণ ও প্রাণহীন মৃতদেহ মাত্র । মোটের উপর ইসলাম(অর্থাৎ আত্ম সমর্পণ),ইমান ও মারেফাতে এলাহি এই তিনটি মিলিয়া শরীয়ত গঠিত হইয়াছে। অর্থাৎ এই তিনটির সমষ্টিগত অস্তিত্ব বা ব্যবহার নাম শরীয়ত। সুতরাং উহাদের একটি বাদ পড়িয়া গেলেই শরীয়ত অপূর্ণ থাকিয়া যাইবে। ইসলাম ও ইমান লাভ করিবার জন্য মারেফাতে এলাহি হাসেল করাও ফরজ। অতএব ,আহলে মারেফাত না হইলে আহলে শরীয়ত হওয়া যায় না এবং যিনি আহলে শরীয়ত ,তিনিই আহলে মারেফাত “ অহাবীগণ আহলে মারেফাত নহে বলিয়া তাহারা শরীয়ত ইহতেও বঞ্চিত হইয়া থাকে ।মহব্বত ও আদবের অভাব বুদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ তত্বজ্ঞাণের অভাবে সন্দেহ ও অবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হইয়া রসুল্লাল্লাহ(দঃ)-এর সহিত এবং তাঁহার প্রতিনিধিস্থানীয় আউলিয়াগণের সহিত দেয়াদবি করিবার দরুন অহাবীদের মন রহমতে এলাহির অভাবে মরিয়া গিয়াছে ।ঐ সকাল কাষ্ঠহৃদয় লোক হইতে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয় । অবশ্য সর্বসাধারণ আহলে শরীয়ত না হইলেও চলিতে পারে ।নেতার প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা রাখিয়া কাজ করিয়া গেলেই মুক্তি পাইতে পারিবে,কিন্তু চালক যদি প্রকৃত প্রস্তাবে আহলে শরীয়ত না হয় তাহা হইলে তাহার অনুসরণকারীগণ শুধু আনুষ্ঠানিক কাজ অন্ধের মতো করিয়া চলিলে লাভবান হইতে পারিবে না ।রসুলাল্লাহ(দঃ) এর সময়কার অনুসরণকারীদের কথা আলাদা ।তাঁহাদের তথ্য বুঝিবার কোনো প্রয়োজন ছিল না।মহানতম নেতার আদেশ পালন করাই ছিল তাহাদের জন্য যতেষ্ট,কারণ ,তিনি স্বয়ং ইসলাম । যাহার সঙ্গে যে মহব্বত রাখে তাহার সঙ্গে সে পরকালে মিলিত হইবার সুযোগ লাভ করিবে।ইহা কোরান হাদিসের একটি বিষেষ বক্তব্য ।পাপী তাপী সর্বসাধারণের শুধু ইহার সাহায্যে ক্রমোন্নতি লাভ করিবার আশা করিতে পারে নতুবা নিজে এবাদত করিয়া কোরান হাদিসের অনুমোদন লাভ করিবার মতো এবাদত লইয়া পরকালে যাইতে পারবে-এইরুপ আশা করা কঠিন। রসুল(আঃ) এর প্রতিনিধিস্থানীয় যতো অলিয়ে কামেল যুগে যুগে বিকশিত হইয়া আসিতেছেন তাহাদের সঙ্গে আনুগত্য ও প্রেমের সম্বন্ধ যাহারা রাখিবেন তাহারা সবাই নূরে মোহাম্মাদীর শাফায়াত লাভ করিবেন ।অহাবীরা সেই সুযোগ হইতে বঞ্চিত।তাহারা বলে -আমরা রসুলাল্লাহ(আঃ) এর সরাসরি অনুসরণ করিব।মধ্যস্থ কোনো লোকের অনুসরন আমরা করিব না । পরবর্তী লোকের জন্য হুজুর(আঃ) কে সরাসরি চেনা সহজ নহে এবং তাঁহার অনুসরণ করাও সহজ নহে । কোনো আহলুল্লাহ্র সংস্রব না রাখিয়া শুধু আপন এবাদতের দ্বারা মুক্তিলাভ করা লক্ষ লোকের মধ্যে একজনের সম্ভব হইতে পারে । সংসার জীবনে আমিত্বের বিস্তারিত জাল্কে সুটাইয়া একের দিকে সকল চিন্তাধারা নিবন্ধ করিয়া একের প্রতিষ্ঠা নিজ মনে নিবদ্ধ করিয়া রাখা সহজ বিষয় নহে ।সূক্ষা সত্যের পথে পা রাখা কাহারো পক্ষে এককভাবে মোটেই সহজ নহে ।অথচ কামেল ব্যক্তিগণ হইতে মানুষের মনকে সরাইয়া অহাবীগণ মানুষকে ফেলিয়া দেয় নিতান্ত একা ও অসহায় অবস্থায় ।বাহ্যিক এবাদত এবং আত্মগরিমার পাপ-পঙ্কিলে আবদ্ধ করে তাহাদের মনকে । কোনো মহামানবের ফয়েজ (আধ্যাত্মিক সাহায্যে ব্যতীত ক্ষমালাভ করা এবং জীবদ্দশায় আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ লাভ করা যায় না। এইদিকে আল্লাহ ছাড়া কাহারও দারস্থ হওয়া অহাবী মতে শেরেক ,অথচ নূরে মোহাম্মাদীর দ্বারস্থ না হইয়া আল্লাহর দ্বারস্থ হওয়াই যায় না । হুজুর করীম (সঃ) বলিয়াছেন “আউলিয়াগণ আমার জুব্বার আড়ালে ,আমি ব্যতীত অন্য কেহ তাহাদিগকে চিনিতে পারে না” অর্থঃআল্লাহ যখন যাঁহার নফসের মধ্যে নূরে মোহাম্মাদী প্রদান করেন(নূরে মোহাম্মাদী জাগ্রত ও বিকশিত করিয়া তুলেন)তখন সেই ব্যক্তি উহা দ্বারা আউলিয়াগণকে চিনিতে পারেন । হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ আজমেরী (রঃ) এইরুপ বলিয়াছেন ,যাহার পীর নাই তাহার জন্য রসুলের শাফায়াত নাই।যাহার জন্য রসুলল্লাহ(আঃ) নাই তাহার জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও মুক্তি নাই। যাহার পীর নাই শয়তানই তাহার পীর।

 মসজিদ দর্শন -সুফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী (র)।

সুলতান-উল-হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী-

সুলতান-উল-হিন্দ,  গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (র) হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৪১ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন
তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন। ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTdfMTNfMV80XzFfNDExNDc=#sthash.XiNFeBLM.dpuf
তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন। ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTdfMTNfMV80XzFfNDExNDc=#sthash.XiNFeBLM.dpuf
তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন। ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTdfMTNfMV80XzFfNDExNDc=#sthash.XiNFeBLM.dpuf
তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন। ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTdfMTNfMV80XzFfNDExNDc=#sthash.XiNFeBLM.dpuf
তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দীন হাসান। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। খাজা সাহেব মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন। ইব্রাহিম কান্দুযী নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি তাঁর ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন। - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTdfMTNfMV80XzFfNDExNDc=#sthash.XiNFeBLM.dpuf

 তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন, কুতুব উল আক্তাব হযরত খাজা সাঈদ মুহাম্মদ কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকি (রঃ) , বাবা ফরিদউদ্দিন গাঞ্জশাকার (র) , সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) সহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

ধারনা করা হয় সুলতান-উল-হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র) ৫৩৬ হিজরী/১১৪১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পারস্যের সিসটান রাজ্যের চিশতীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনের বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে পানি দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইব্রাহিম কুন্দুজী (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)।. যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদানস্বরুপ কুন্দুজী মইনুদ্দিনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এই পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতড়ন করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞনার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিস্তিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর (র) নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী(র) তাকে খেলাফত বা ছুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।


একবার তিনি এক এলাকা দিয়ে সফর করছিলেন এমন সময় দেখতে পেলেন পথিমধ্যে একটি হুজরা শরীফ দেখা যাচ্ছে। সেই হুজরা শরীফ-এর দরজা খোলা রয়েছে। সেই ঘরের ভিতরে একজন আল্লাহ পাক উনার ওলী বসে রয়েছেন হযরত গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি উনার দিকে সেই ওলীআল্লাহ তিনি তাকালেন এবং উনাকে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাক দিলে হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হুজরা শরীফ-এর ভিতরে ঢুকার পূর্বে দেখতে পেলেন হুজরা শরীফ-এর দু’দিকে দুটি বাঘ বসে রয়েছে। তিনি ফিকির করলেন নিশ্চয়ই বাঘ দু’টি আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার খাদিম হবে। এরপর তিনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন তখন সেই আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, হে বাবা! আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে মশগুল রয়েছেন। তাহলে আপনি দুটি নছীহত সব সময় মনে রাখবেন যা আপনার জীবনে কাজে লাগবে।
প্রথম নম্বর হচ্ছে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া কোনো মাখলুকাতকে ভয় করবেন না, একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করবেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছেই সমস্ত কিছু চাবেন বেশি বেশি আরজি ও দোয়া করবেন। হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে “যে চায় সে পায়” আর যে চায় না সে কি করে নিয়ামত পেতে পারে। হযরত গরীবে নেওয়াজ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই দুটি নছীহত মুবারক আমার অনেক কাজে লেগেছে। সুবহানাল্লাহ! উনার জীবনী মুবারকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশক্রমে হিন্দুস্থানে তাশরীফ আনলেন তখন হিন্দুস্থানের রাজা ছিল পৃথ্বীরাজ। ওই মুহূর্তে হিন্দুস্থানের প্রায় সমস্ত মানুষই ছিল বিধর্মী। কিন্তু হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ওই সমস্ত বিধর্মীদেরকে ভয় পাননি। একাই সমস্ত বাতিল, কুফরী, শিরকী, সমূলে মূলোৎপাটন করে গোটা হিন্দুস্থানে ইসলাম জারি করলেন এবং এক কোটিরও বেশি বিধর্মী উনার মুবারক হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

স্মরণীয় যে, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত বেমেছাল। এমন ব্যক্তিত্ব যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা স্বয়ং লক্বব মুবারক দিয়েছেন ‘ইয়া কুতুবাল হিন্দ, ইয়া কুতুবাল মাশায়িখ’। উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার কপাল মুবারকে কুদরতীভাবে লিখা উঠেছিলো “হাযা হাবীবুল্লাহ মাতা ফি হুব্বিল্লাহ” অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ছুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আব্দুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদীনায় অবস্থান ও জিয়ারতকালে নবী মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক ছুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন।

তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকীকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় পর্দা গ্রহন করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তার বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে ওরছ অনুষ্ঠিত যাতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়।

তথ্যসূত্র-  উইকিপিডিয়াThe Daily Al Ihsanদৈনিক ইত্তেফাক
ইত্তেফাক

Monday, December 29, 2014

মারিফত কি ?



মারিফত কি ?
আমরা অনেকেই বলে থাকি মারিফত অতি গোপনেরও গোপন ৷ আসলে সেই গোপনেরও গোপনটা কি ? আমরা যাহা দেখি নাই এবং চিনিও নাই তাহাই গোপন, যাহা দেখতে পাই বা চিনা জানা হয়েছে তাহা গোপন নয়, প্রকাশ ৷ মারিফতের সংঙ্গা অনেক ভাবে হতে পারে, আমি সংক্ষেপে বললাম ৷ মারিফত হলো আপন মুর্শিদের উছিলার মাধ্যমে নিজেকে অর্থাৎ আপন অজুদকে/দেহের মোকাম মঞ্জিলকে চিনা এবং জানা ৷ যাহা আমি অতীতে দেখিও নাই চিনিও নাই ৷ আর এই অদেখা, অচেনা, অবুঝা, বিষয়টি সুন্দর ভাবে বুঝে, চিনে, নিজেকে/অজুদকে চিনার মাধ্যমে আল্লাহ তথা রবকে চেনার নাম, জানার নাম, বুঝার নামই মারিফত অর্থাৎ "মান আরাফা নাফসাহুর" কর্ম সাধনা যার মাধ্যমে "ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু" কে চেনা যায় এবং জানা যায় ৷
আমি একটি ছোট্র উদাহরন দিতে চাই, আসলে মারিফত কি ?
যেমন দরুন এক জন লোক বলল, আমি এক গ্লাস শরবত পান করিব ৷
১) শুধি পাঠক এখানে আমি এক গ্লাস শরবত পান করিব দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করা হলো, যাহা শরিয়ত ৷
২) শরবত পান করতে বললেই শরবত পান করা হয় না, শরবত তৈরীর একটা পাত্রের প্রয়োজন হয়, যাহা তরিকত ৷
৩) শরবত পান করতে হলে শরবত তৈরীর উপাদানের প্রয়োজন হয়, যেমন পানি, চিনি, লবন, লেবু এবং একটি পাত্র, এই সব গুলো উপাদানের যেই মিশ্রনটি তৈরী হয়, তাহাই হলো হাকিকত ৷
৪) শরবত তৈরীর মিশ্রন থেকে শরবত তৈরী হলো, কিন্তু এর স্বাদ কি ? শরবত পান না করলে কি বুঝা যাবে ? এর স্বাদ পান করার পরই অনুভব করা যায়, আর সেই আস্বাধন করা স্বাদের নামই মারিফত ৷
আমরা যখন সাধন পথে অগ্রসর হই, তখন একজন কামেলে মোকাম্মেলের সরনাপন্য হই, আর সেই কামেলে মোকাম্মেলের উছিলার মাধ্যমে আপনার আপনকে চেনা এবং জানা যায় ৷ আর সেই চেনা জানার নামই হলো মারিফত৷

লিখেছেন- দ্বীন মোহাম্মদ চিশতী নিজামী ৷
তথ্যসূত্রঃ  Spiritual Worship (আধ্যাত্মিক সাধনা)

Sunday, March 9, 2014

এলাহি আল-মিন গো আল্লাহ্‌ বাদশা আলামপানা তুমি- লালন গীতি


এলাহি আল-মিন গো আল্লাহ্‌ বাদশা আলামপানা তুমি


তুমি ডুবায়ে ভাসাইতে পারো, ভাসাইয়ে  কিনার দাও কারো
রাখো মারো হাত তোমারও, তাইতে তোমায় ডাকি আমি।
এলাহি আল-মিন গো আল্লাহ্‌ বাদশা আলামপানা তুমি।।

 নূহ নামে এক নবীরে ভাসাইলে অকূল পাথারে,
আবার তারে মেহের করে আপনি লাগান কিনারে,
জাহের আছে ত্রি সংসারে- আমায় দয়া কর স্বামী।

নিজাম নামে এক বাটপার সেত, পাপেতে দুবিয়া রইত,
তার মনে সুমতি দিলে, কুমতি তার গেলো চলে,
আউলিয়া নাম খাতায় লিখলে- জানা গেলো ওই রহমি।

নবী না মানিল যারা মহায়েদ কাফেরও তারা,
সেই মহায়েদ দায়মল হবে, বেহিসাব দোজখে যাবে,
আবার তারে খালাস দিবে, লালন কয় মোর কি হয় জানি।

এলাহি আল-মিন গো আল্লাহ্‌ বাদশা আলামপানা তুমি।।



Sunday, February 16, 2014

পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী- ১

গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ)
পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) ১লা রমজানুল মোবারক হিজরী ৪৭০ বা ৪৭১ সালে পারস্যের এক বিখ্যাত জনপদ ‘জিলানে’ এ জনপদে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হযরত সায়েদ শেখ আবু সালেহ (রঃ) ছিলেন একজন কামেলদার সুফি এবং মাতা  সাইয়েদেনা ফাতেমা (র:)। তার পিতৃকুলের একাদশতম উর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন হযরত হাসান (র:) এবং তার মাতা সাইয়েদেনা ফাতেমা (রঃ) এর চৌদ্দতম উর্ধ্বতন পুর্বপুরুষ ছিলেন হযরত ইমাম হোসেইন (রঃ)।

বড় পীর যখন মাতৃগর্ভে  তার মাতা সাইয়্যেদেনা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রঃ) একদিন স্বপ্ন দেখেন জগতের আদি মাতা হজরত হাওয়া (আঃ) আনন্দের সাথে বলছেন- "ওহে ফাতেমা তুমি এই মাকলুকাতের ভাগ্যবতী মহিলা, তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে, সে হবে আওলিয়াকুল শিরমনি গাউসুল আজম।”

 হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রঃ) এর বয়স যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন।তার লালন-পালন ও পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর। তার মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা নির্বাহ করতে শুরু করেন।মাতা পুত্রকে কখনও কখনও অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়।যেদিন ঘরে কিছু খাবার না থাকতো তখন মা বলতেন,”আজ আমরা আল্লাহপাকের মেহমান।”
 
পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) একদিন উদাস মনে নদীর পারে বসে ছিলেন। ঐ সময়  একটি আপেল ভেসে যাচ্ছিল,  তিনি ফল টি খেয়ে ফেলেন, খেয়ে ফেলার পর তার মনে হল সে যে ফল টি খেল তা কথা থেকে এসেছে, তার ফল টি খওয়া টি ঠিক হয়নি তাই তিনি স্রতের উল্টো দিকে হাটা শুরু করল ফলের মালিকের খুজে বের করার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে ফলের বাগানের মালিক কে খুজে পেল। সেই বাগানের মালিক ছিলেন
সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ সাউয়েমী (রঃ)। তিনি ছিলেন অনেক বড় মাপের সূফী। বড় পীর যখন তার সব কথা খুলে 
 বললেন এবং ফল টি খেয়ে ফেলার জন্য ক্ষমা চেলেন সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ সাউয়েমী (রঃ) বিস্মিত মনে মনে ভাবলেন এই যুবকের অন্তরে তো অনেক আল্লাহভীতি, একেতো হাত ছাড়া করা যায় না। তিনি বললেন, ‘আপেলেরতো অনেক মুল্য।কি এনেছ তার জন্য ?’ আবু সালেহ জবাব দিলেন,’আমার কাছেতো কোন টাকাপয়সা নেই’ তবে গায়ে খেটে মুল্য পরিশোধ করতে চাই।আপনি যতদিন খুশী গায়ে খাটিয়ে নিতে পারেন।’হজরত সাউয়েমী র: বললেন ওয়াদা করবার আগে ভাল করে ভেবে দেখ। আবু সালেহ বললেন আমি ওয়াদা পুর্ন করবো ইনশাআল্লাহ। সাউয়েমী (রঃ) বললেন তোমাকে পুরো এক বৎসর বাগানের দেখাশোনার কাজ করতে হবে উপরন্তু আমি যখন যে কাজের হুকুম দিব তাই করতে হবে। কোন কথা ছাড়াই সব শর্ত মেনে নিলেন আবু সালেহ।সময় শেষ হবার পর নুতন শর্ত যুক্ত করলেন সাউয়েমী র:।তিনি বললেন ‘আমার একটি অন্ধ,বধির ও বোবা কন্যা আছে তাকে তোমার বিয়ে করতে হবে’। তাতেও রাজী হলেন আবু সালেহ।বিয়ের পর বাসর ঘরে ঢুকেই তাজ্জব বনে গেলেন আবু সালেহ।তার নব বধুতো অপরুপা! অন্ধ,বধির বা বোবা কিছুই নন।পরদিন ব্যখ্যা দিলেন সাউয়েমী র:।আমার এই কন্যা কোনদিন ঘরের বাইরে যায়নি,বাইরের কোন লোকের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায়নি এবং তার মুখে কখনও অশ্লীল বাক্য উচ্চারিত হয়নি।তাই তাকে আমি অন্ধ,বধির ও বোবা বলেছিলাম।


বাল্যবয়সেই পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর জীবনে বিভিন্ন আলৌকিক ঘটনাও ঘটতে শুরু করে।একবার সমবয়সী বালকদের সাথে খেলায় যোগ দেয়ার ইচ্ছা করলে গায়েবী আওয়াজ এলো,”হে বরকতময় সত্তা ,আমারকাছে এসো!”কথা শোনা গেলেও কন্ঠটি কার বা কোথ্থেকে এলো কিছুই তিনি বুঝতে পারলেন না।তাছারা কোন লোকও তিনি সেখানে দেখতে পেলেন না।তাই ভয়ে দৌড়ে তিনি ময়ের কাছে চলে এলেন। এরকম আরো বহুবার হয়েছে।

 একবার নিদ্রাকাতর অবস্হায় সুখময় নিদ্রা যাচ্ছিলেন।এমন সময় ঘুমের ঘরে তিনি স্বপ্নে দেখিলেন-একজন
উজ্জল জ্যোতিবিশিষ্ট স্বর্গীয় ফিরেশতা তাহার শিয়রের নিকট এসে অত্যন্ত কোমল স্বরে বলিতেছেন- ”হে আল্লাহর মনোনিত আব্দুল কাদির!উঠ,আর নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থেক না।সুখ শয্যার কোলে ঢলে পড়বার জন্য এই পৃথিবিতে তোমার আগমন ঘটেনি।তোমার কর্তব্য ও দায়িত্ব সুদুরপ্রসারী! মোহগ্রস্হ,নিদ্রাচ্ছন্ন জনগনকে নিদ্রার মোহ থেকে মুক্ত করিবার জন্যই তোমার আগমন ঘটেছে।



সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) (১২৩৮ - ১৩২৫ এপ্রিল ৩) সংক্ষিপ্ত জীবনী







Saturday, February 15, 2014

সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) (১২৩৮ - ১৩২৫ এপ্রিল ৩) সংক্ষিপ্ত জীবনী

সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) (১২৩৮ - ১৩২৫ এপ্রিল ৩) এছাড়াও হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া  নামে পরিচিত , তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ মধ্যে চিশতিয়া তরিকার একজন বিখ্যাত সূফী আউলিয়া ছিলেন। .তিনি ভারতে চিশতিয়া তরীকার মহান সূফীদের একজন। তার পূর্বসুরীদের মধ্যে হজরত ফরিদ গাঞ্জশাকার, হজরত বখতিয়ার কাকী এবং গরীবে নেওয়াজ হজরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী (রঃ) ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের চিশতিয়া তরিকায় আধ্যাত্মিক চেইন বা সিলসিলা।

হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রঃ), তার পূর্বসুরীদের মত, ঈশ্বর কে বুঝতে ভালোবাসার জোর এবং তার জন্য ঈশ্বরের প্রেম মানে মানবতার প্রেম এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন। তার ধর্ম - নিরপেক্ষতা ও উদারতা এবং অত্যন্ত প্রসূত জ্ঞানের জন্য দিল্লি মুসলমানদের উপর তার প্রভাব আর উপলব্ধ বিস্তার হয়েছিল। ১৪ তম শতাব্দীর ইতিহাসলেখক জিয়াউদ্দিন বারানি দাবি করেন, যে দিল্লি মুসলমানদের উপর তার প্রভাব এবং উপলব্ধীর কারনে তাদের পার্থিব বিষয়ের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়।

১৬ শতকে মোঘল সম্রাট আকবর এর উজির আবুল-ফাযল ইবনে মুবারাক লিখিত "আইন-ই-আকবর" এ উল্লেখ আছে সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ)  উত্তর প্রদেশের ( দিল্লি পূর্ব ), বাদাউন এ জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সে তার পিতা হজরত আহমদ বাদাউনি মৃত্যুর পর তিনি তার মা বিবি জুলেখা সঙ্গে দিল্লি চলে আসেন।

বিশ বছর বয়সে,হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া আজওধান ( পাকিস্তান উপস্থিত পাকপাতাআন শরীফ ) যান এবং সেখানে হজরত বাবা ফরিদ নামে পরিচিত সুফী সন্ত ফরিদ গঞ্জেসাকার (রঃ) এর সাথে দেখা হয় এবং তিনি তার বায়াত নেন। হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া আজওধানে স্থায়ী বসবাস করলেন না। তিনি একযোগে সুফী ধার্মিক পদ্ধতি এবং নির্ধারিত litanies জন্য  দিল্লিতে তাঁর আধ্যাত্মিক গবেষণার সঙ্গে অব্যাহত থাক্লেন। তিনি বাবা ফরিদ গাঞ্জসাকার (রঃ) কাছে প্রতি বছর রমজান মাস কাটাতেন। যখন তিনি তৃতীয় বার বাবা ফরিদ এর কাছে আসেন, বাবা ফরিদ গঞ্জসাকার (রঃ) তাকে তার উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া দিল্লী ফিরে আশার কিছু দিন পরই  বাব ফরিদ (রঃ) পর্দা গ্রহন করেন।
হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া গিয়াসপুর খানকা শরিফ করার আগে দিল্লির বিভিন্ন শহরে বসবাস করেন।শহর জীবনের গোলমাল এবং তাড়াহুড়া জন্য তিনি এখানে খানকা শরিফ করেন।

তিনি ১৫২৫ সালের ৩ই এপ্রিল  সকালে পর্দা গ্রহন করেন। তার দরগা দিল্লিতে অবস্তিত, উনার গরগা  বর্তমান কাঠামো ১৫৬২ সালে নির্মাণ করা হয়। তার পর্দা গ্রহনের দিন প্রতি বসর এখানে ওরস হয় এবং লাখ লাখ মানুষ তার দরগা জিয়ারত করতে আসেন।

তথসুত্রঃ উইকিপিডিয়া


গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র) এর পত্র


পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী- ১

Friday, February 14, 2014

গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র) এর পত্র

হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) তিনি তার প্রধান খলিফা হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকিকে উদ্দেশ্য করে লিখে পাঠিয়ে ছিলেন।
দরদমান্দ তালেব (ব্যথিত অন্বেষণকারী), আরজুমান্দ ওয়া এস্তিয়াকে শওকে দিদারে এলাহি (আল্লাহর দিদারের আগ্রহী ও আশাবাদী), দরবেশে জাফাকেশ (অত্যাচারিত দরবেশ), ভাই খাজা কুতুবুদ্দিন দেহলবি, আল্লাহ্ তোমাকে দোজাহনের সৌভাগ্য দান করুন।
আমার সালাম জানবে। পর সমাচার এ যে, একদিন আমার হাদিয়ে রওশন জামির খাজা উসমান হারুনির খেদমতে খাজা নজমুদ্দিন ছোগরা, খাজা মুহাম্মদ তারেক ও এ অধম উপস্থিত ছিল।’ এমন সময় এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘এটা কী করে অবগত হওয়া যায় যে, কার কোরবে এলাহি (আল্লাহর নৈকট্য) হাসিল হয়েছে ?’ খাজা উসমান হারুনি জবাবে বললেন,‘নেক আমল করার ক্ষমতা লাভ করাই এর বড় দলিল।’ নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নেক আমল করার সৌভাগ্য অর্জন করেছে তার সামনে কোরবে এলাহির দরজা খুলে গেছে। এক ব্যক্তির একটা ক্রীতদাসী ছিল।ক্রীতদাসীটি প্রতিদিনি গভীর রাতে জাগরিত হয়ে অজু করে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করতো।এটা তার প্রাহ্যহিক নিয়ম ছিল। নামাজ শেষে সে মোনাজাত করে বলতো, ‘হে খোদা, আমি তোমার নৈকট্য লাভ করেছি। আমকে তোমার এ নৈকট্য থেকে কখনো দুরে সরিয়ে দিয়ো না।’ একদিন ক্রীতদাসীটির প্রভু তার এ রকম প্রার্থনা শুনে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কিভাবে অবগত হলে যে, তুমি খোদার নৈকট্য লাভ করেছো।’ জবাবে সে বললো, ‘যখন খোদা আমাকে প্রতিদিনি অর্ধরাতে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দিয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন তখান এটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি যে, আমি তাঁর নৈকট্য লাভ করেছি।’ একথা শ্রবণ করার পর লোকটি তার ক্রিতদাসীকে আজাদ করে দিয়েছিল।

অতএব ইনসানের একান্ত কর্তব্য হলো, সে দিবারাত্র আল্লহর এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থেক বান্দাগণের দফতরে স্বীয় নাম সন্নিবেশিত করে লয় এবং নফস ও শয়তানের ধোকাবাজি থেকে রক্ষা পায়। ওয়াসসালাম

তথ্য সুত্র : আসরারে হকিকি এবং দেওয়ান এ মইনুদ্দিন 

 

সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) (১২৩৮ - ১৩২৫ এপ্রিল ৩) সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর জীবনী (৫৯৭ হিঃ-৭৪৭হিঃ) (১১৯৭-১৩৪৭)

 

 

হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)-এর জীবনী (৫৯৭ হিঃ-৭৪৭হিঃ) (১১৯৭-১৩৪৭)


১৪ শতাব্দীতে যে সকল অলি-আউলিয়ারা বর্তমান বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন হলেন হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহঃ)। ভারত উপমহাদেশে খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)-এর পরে এই ভূখণ্ডে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী (রহঃ)। তিনি আরবের দক্ষিণে অবস্থিত ইয়েমেন রাজ্যে হাডরামন্টের কুনিয়া শহরে ৫৯৭ হিজরি ১১৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে তিনি তুরস্কের কোনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন তবে অধিকাংশের মতে তিনি ইয়েমেনেই জন্মগ্রহণ করেছেন বলে ধরা হয়। তাঁর পিতা শায়খ মুহম্মদ যিনি প্রখ্যাত সূফী জালাল আদ্ দ্বীন মুহম্মদ রুমী (রহঃ)-এর সমসাময়িক ছিলেন এবং মাতা সৈয়দা ফাতিমা হাসিনা সাইদা। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই তিনি তাঁর স্নেহময়ী মাকে হারান ও কিছুদিন পরে তিনি তাঁর বাবাকেও হারান। পিতৃ ও মাতৃহারা শাহজালাল তাঁর নিকটাত্মীয় মামা ও আধ্যাত্মিক গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের আদর স্নেহে বড় হতে থাকেন।


গজার মাছ
হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর নসবনামা বা বংশ তালিকা :
# হযরত আলী (রাঃ)
# হযরত ফাতেমা (রাঃ)
# ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ)
# ইমাম জায়েদ (রাঃ) # ইমাম আলী আসগর (রাঃ)
# ইমাম তাজউদ্দিন তাইজী (রঃ)
 # ইমাম সৈয়দ জাফর সাদিক (রাঃ)
# ইমাম ইব্রাহীম কোরেশী (রঃ)
# হযরত জালাল উদ্দিন সুরুখ (রঃ)
# শায়েখ মহাম্মদ (রঃ)
 # হযরত ফাতিমা হাসিনা সাইদা (রঃ)
# হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রঃ)


জালালি কবুতর
হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর শাজরা শরিফ
# হযরত মুহম্মদ (দঃ)
# হযরত আলী কারামুল্লাহ (রাঃ)
# হযরত হবিব আজমী (রহঃ)
# হযরত শেখ হায়দর আলী (রহঃ)
# হযরত শেখ মারুফ কারখী (রহঃ)
# হযরত শেখ সরিস খতি (রহঃ)
# হযরত মমসাদ দিনুরী (রহঃ)
# হযরত শেখ মুহাম্মদ (রহঃ)
# হযরত শেখ আহমদ দিনুরী (রহঃ)
# হযরত শেখ অজি উদ্দিন (রহঃ)
# হযরত আবু নছর জিয়া উদ্দিন (রহঃ)
# হযরত মখদুম বাহাউদ্দিন (রহঃ)
# হযরত আবুল ফজল সদর উদ্দিন (রহঃ)
# হযরত রোকনুদ্দিন আবু ফতাহ (রহঃ)
# হযরত জালাল উদ্দিন বোখারী (রহঃ)
# হযরত সৈয়দ আহমদ কবির (রহঃ)
# হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রহঃ)


হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাঁর শিক্ষা শেষে কুরআনে হাফেজ ও ইসলামি দর্শন ও তত্ত্বশাস্ত্রেও প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি জাহেরি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ধ্যান সাধনার মাধ্যমে বাতেনি জ্ঞান অর্জন করেন এবং তিনি প্রায় ত্রিশ বছর বয়সেই আধ্যাত্মিক সূফী জ্ঞানে পরিপূর্ণতা বা কামালিয়াত অর্জন করেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায় হযরত শাহজালাল (রহঃ) একদিন স্বপ্নযোগে রাসুলে পাক (দঃ)-এর পক্ষ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের গৌড় রাজ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। তিনি এই স্বপ্নের কথা তাঁর স্বীয় মুর্শিদ হযরত সৈয়দ আহমদ কবির (রহঃ)-এর কাছে বলার পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন- ‘যে মাটির রং ও গন্ধ এই মাটির সঙ্গে মিলবে সেখানেই তুমি অবস্থান নেবে এবং সেখান থেকেই তুমি ধর্ম প্রচার করবে।’ ভারতে আগমনের বহু পূর্বেই তিনি উচ্চস্থানীয় আধ্যাত্মিক সূফী সাধক বা কামেল অলি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। হযরত শাহ্জালাল স্বীয় মুর্শিদের আদেশ পেয়ে ১২ জন দরবেশকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দুস্থান তথা ভারতের উদ্দেশে রওনা হলেন। তবে তিনি প্রথমে তার জন্মস্থান ইয়েমেনে শেষবারের মতো যান। ইয়েমেনে এই সাধক মহাপুরুষের আগমন সংবাদে অনেক সত্যান্বেষী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যাকুল হলে তৎকালীন অত্যাচারী শাসক হযরত শাহজালাল ইয়েমেনীকে হত্যার উদ্দেশে বিষ মিশিয়ে শরবত প্রেরণ করেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) তার দিব্যজ্ঞান দ্বারা শাসকের দুরভিসন্ধি বুঝে ফেলেন এবং মুচকি হেসে বললেন ‘এই পানপাত্রের শরবত সাধারণের জন্য বিষ মিশ্রিত হলেও আমি মুসাফির ফকিরের কাছে তা অমৃতের মতো এবং মধুমিশ্রিত এই বলে তিনি তা পান করেন। আল্লাহর অলিদের আল্লাহ স্বয়ং রক্ষা করে থাকেন; কোনো বিষক্রিয়া তো দেখাই গেলো না বরং রাজা নিজ রাজপ্রসাদেই বিষের যন্ত্রণায় প্রাণ হারালেন। পরবর্তীতে ঐ রাজার পুত্র রাজার স্থলাভিষিক্ত হলেও তিনি পরবর্তীতে রাজ্য ত্যাগ করে হযরত শাহজালালের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন।
হযরত শাহজালাল (রহঃ) ইয়েমেন থেকে বাগদাদে আসেন এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পারস্যে আসেন। পারস্য থেকে তিনি আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান হয়ে ১৩০৩ সনে দিল্লিতে পৌঁছান। ভারতে পৌঁছার পর তিনি হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী [১১৪১-১২৩০] (রহঃ)-এর মাজার জিয়ারত করে তাঁর কাছ থেকেও ফায়েজপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি সুলতানুল মাশায়েখ হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া [১২৩৮-১৩২৫] (রহঃ)-এর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। বিদায়কালে তিনি হযরত শাহজালাল (রহঃ)-কে সুরমা রংয়ের দুই জোড়া কবুতর উপহার দেন যা ‘জালালি কবুতর’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। ভারতবর্ষে হিন্দু মুসলমান বা অন্য সম্প্রদায়ের কেউ এই কবুতরকে হত্যা করে না কেননা মানুষের মনের বিশ্বাস যে, এই কবুতর কেউ হত্যা করলে তার অমঙ্গল নিশ্চিত। আবার এই কবুতর আপন ইচ্ছায় কারো গৃহে বাসা বাঁধলে তার মঙ্গল সুনিশ্চিত। হিন্দু মুসলমানসহ সকলের কাছে এই ধারণা যুগ যুগ থেকে চলে আসছে। প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরত শাহজালাল তাঁর মহানুভবতা দিয়ে এই পায়রা শ্রেণীকে নতুন এক মর্যাদা দান করেছেন।
তৎকালীন শ্রীহট্টের অধিপতি রাজা গৌড় গোবিন্দ জাদুবিদ্যায় পারদর্শী একজন মুসলিম বিদ্বেষী শাসক ছিলেন। তৎকালীন শ্রীহট্ট বর্তমান সিলেট শহরের পূর্বদিকে টোল টিকর নামক স্থানে শেখ বুরহানউদ্দিন নামে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি সন্তানপ্রাপ্তির আশায় একটি গরু কুরবানির মানত করেন এবং আল্লাহ তাকে একটি পুত্রসন্তান দান করেন। শেখ বুরহানউদ্দিনের এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জগতের সকল সুখ-দুঃখ আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং এর পেছনে তাঁর নিগূঢ় উদ্দেশ্য লুকায়িত থাকে যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। যথারীতি পুত্রপ্রাপ্তির পর তিনি গরু কুরবানি করেন। কুরবানির এক টুকরা গোশত চিল ছোঁ মেরে নিয়ে যায় এবং ঘটনাক্রমে তা গৌড় গোবিন্দের প্রাসাদের সামনে পড়ে। রাজা ক্রোধান্বিত হয়ে গো হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন এবং অনুসন্ধানে শেখ বুরহানউদ্দিনকে দায়ী করে রাজার সামনে উপস্থিত করা হয়। শেখ বুরহানউদ্দিন অকপটে গরু জবাইয়ের কথা স্বীকার করলে রাজা তার ডান হাত কেটে নেন এবং শিশুসন্তানটিকে হত্যা করেন।
অশান্তি আর মানসিক যন্ত্রণা তাড়া করে বেড়াতে লাগলো শেখ বুরহানউদ্দিনকে। পুত্রশোকে কাতর শেখ বুরহানউদ্দিন পাগলপ্রায় হয়ে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিনের দরবারে পৌঁছে রাজা গৌড় গোবিন্দের অত্যাচারের নির্মম কাহিনী বর্ণনা করে নালিশ জানান। সুলতান এই করুণ কাহিনী শুনে বড়ই মর্মাহত হলেন এবং রাজাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য স্বীয় ভগ্নিপুত্র সেকান্দার শাহ্কে প্রধান করে সৈন্যসহ শ্রীহট্টে পাঠান। সেকান্দার শাহ্রে বাহিনী শ্রীহট্টে পৌঁছার পূর্বেই রাজা গৌড় গোবিন্দ তাদের ওপরে অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করেন। সৈন্যদের অগ্নিবাণ সম্বন্ধে ধারণা না থাকায় বহু সৈন্য নিহত হয়। সেকান্দার শাহ্ এই অবস্থা দেখে পশ্চাৎপদ হয়ে আরো প্রায় দুবার প্রচেষ্টা করেও সফল হতে পারলেন না এবং তিনি তা দিল্লির সম্রাটকে অবহিত করেন। দিল্লির সম্রাট সৈয়দ নাসিরউদ্দিন শাহ্কে সেকান্দার শাহ্কে সহযোগিতার জন্য প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি দিল্লি থেকে এলাহাবাদে পৌঁছালে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সাইয়্যেদ নাসিরউদ্দিন হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর মুরিদও হয়ে গেলেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) ইয়েমেন থেকে ১২ জন সঙ্গী নিয়ে রওনা করলেও শ্রীহট্টে আসার সময় তার সঙ্গী সংখ্যা ছিল ৩৬০ জন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) ৩৬০ জন শিষ্য এবং বাদশাহের প্রেরিত সেনাদলসহ সোনারগাঁওয়ে সেকান্দার শাহ্রে সঙ্গে মিলিত হন। তিনি হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর পরিচয় পেয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং বিশেষভাবে গৌড় গোবিন্দের অগ্নিবাণই তাদের পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাকে উৎসাহ দিয়ে কোনো ভয় নেই বলে আশ্বস্ত করলেন এবং বলেন, হযরত মুসা (আঃ) যেভাবে ফেরাউনের সমস্ত জাদুকে নিষ্ক্রিয় করেছিলেনÑ আল্লাহর দয়ায় আমরাও গৌড় গোবিন্দের জাদু নষ্ট করে দেবো। তার কর্মের জন্য তার পরাজয় এবং সিংহাসনচ্যুতি সুনিশ্চিত ও অনিবার্য।
অতঃপর তারা ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে পৌঁছে দেখলেন পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাঁর নিজের জায়নামাজ বা নামাজের চাদরে চড়ে সকলকে নিয়ে পার হন এবং গৌড় গোবিন্দের এলাকা শ্রীহট্টের দিকে অগ্রসর হন। গৌড় গোবিন্দ যখন খবর পান যে, এক মুসলিম ফকির তার শিষ্য ও সেকান্দার শাহের সৈন্যবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তার এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তখন তিনি তাদের দিকে অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করতে থাকেন কিন্তু এবারের অগ্নিবাণ কোনো ক্রিয়া না করে উল্টো গৌড় গোবিন্দের দিকে ফিরে আসতে লাগলো এবং তার সৈন্যবাহিনীর ছাউনি ধ্বংস হয়ে গেলো। গৌড় গোবিন্দ এই অলৌকিক ঘটনা দেখে নিজের প্রাণরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল (রহঃ) সদলবলে বাহাদুরপুরের নিকটবর্তী বুরাক নদী পার হয়ে জালালপুরে উপনীত হলেন। রাজা পথিমধ্যে বিভিন্ন শিলাপাথর ও অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে বাধা তৈরি করেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। গৌড় গোবিন্দ নিজের পরাজয় মেনে নিয়ে কাছাড়ের দিকে পালিয়ে গেলেন। হযরত শাহজালাল (রহঃ) সুরমা নদী পার হয়ে শ্রীহট্ট বা সিলেট শহরে প্রবেশ করলেন।
এখানে সিলেট নামকরণে একটা কথা প্রচলিত আছে আর তা হলো হযরত শাহজালাল (রহঃ) যখন সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন রাজার তৈরি করা ব্যারিকেডের শিলাপাথরকে “শিল হট যা” বলে উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে শিলাপাথরগুলো সরে গিয়েছিল বলে জানা যায়। এখান থেকেই সিলেটের নামকরণ হয়েছে বলে ধরা হয়।
সিলেট বিজয়ের পর তিনি সেকান্দার শাহকে রাজ্য বুঝিয়ে দিয়ে তাঁর মুর্শিদের কথামতো তিনি তাঁর ধর্মপ্রচারের স্থানের ব্যাপারে চিন্তা করতে লাগলেন। পূর্বেই তিনি তাঁর মুর্শিদ প্রদত্ত মাটি একজনের জিম্মায় প্রদান করেছিলেন যিনি চাশনী পীর নামেও খ্যাত এবং তাঁর প্রতি আদেশ ছিল পথে এই মাটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য। এই চাশনী পীর এসে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-কে সিলেটের মাটির সঙ্গে তাঁর মুর্শিদের প্রদত্ত মাটির মিলের কথা জানালে তিনি চিন্তামুক্ত হয়ে আস্তানা গাড়ার আদেশ দিলেন।
হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সাহচার্য পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসতে লাগলো এবং তিনি তাদের ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানদান করেন। তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে তিনি তার শিষ্যদের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচারের আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তন্মধ্যে হযরত শাহ পরান সিলেট, হযরত শাহ মালেক ঢাকা, সৈয়দ আহমদ ওরফে কল্লাশহীদ কুমিল্লায়, চট্টগ্রামে খাজা বুরহানউদ্দিন কাত্তান ও শাহ বদরুদ্দীন, সুনামগঞ্জে শাহ্ কামাল কাত্তানী প্রমুখ। হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সঙ্গে ৩৬০ জন সঙ্গী হিসেবে যারা এসেছিলেন তাদের সকলের নাম জানা সম্ভব না হলেও ১৯৭৪ সালে ইংরেজি ভাষায় সিলেট ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে ৩৫৫ জনের নাম সমৃদ্ধ একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। ‘শ্রীহট্ট নূর’ গ্রন্থে ৩০৭ জন আউলিয়ার নাম পাওয়া যায়। মর্তুজা আলী ‘সুহেল ই ইয়ামেন’-এ ২৫২ জন আউলিয়ার নাম উল্লেখ করেন। আল ইসলাহে মোঃ নুরুল হক ৩২২ জন আউলিয়ার নাম উল্লেখ করেন।
হযরত শাহজালাল (রহঃ) তাঁর শেষ জীবন পর্যন্ত ধর্ম প্রচার করে গেছেন। তার ব্যবহার ও অন্যান্য গুণাবলী লক্ষ করে বহু হিন্দু এবং বৌদ্ধ ইসলাম গ্রহণ করেন। বিশ্বের নামকরা পর্যটক মরক্কো তানজানিয়ার অধিবাসী শায়খ সরফ উদ্দিন আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে সিলেট সফরে এসে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। ইবনে বতুতা সিলেটকে কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত অঞ্চল বলে উল্লেখ করেন এবং সমুদ্র তীরবর্তী একটি গহিন বনভূমি বলেও বর্ণনা করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী হযরত শাহজালাল (রহঃ) পাতলা গড়ন ও খুবই সুন্দর চেহারার অধিকারী এবং বেশ লম্বা ছিলেন। তিনি ছাগলের দুধ পান করতেন। সারা বছরই বলতে গেলে তিনি রোজা রাখতেন ও সারা রাত এবাদতে মশগুল থাকতেন। ইবনে বতুতা ‘রিহালা ইবনে বতুতা’য় হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের বিভিন্ন বর্ণনা প্রদান করেন। মোগল কবি হযরত আমির খসরুর কবিতার বইয়েও হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সিলেট বিজয়ের উল্লেখ আছে।
হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর মৃত্যুবরণের সঠিক তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। কিন্তু ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ১৫০ বছর বয়সে ৭৪৭ হিজরি ১৩৪৭ সালে ওফাত গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। তিনি সিলেটেই সমাহিত হন এবং তাঁর সমাধিস্থল দরগা মহল্লা নামে পরিচিত। তার দরগাহের পাশে এক ধরনের বিশেষ মাছের উপস্থিতি রয়েছে যা অনেকটা এদেশের গজার মাছের মতো কিন্তু তা গজার মাছ নয়। তাঁর বাৎসরিক ওরস আরবি জিলকদ মাসের ১৮, ১৯, ২০ তারিখ পর্যন্ত পালন হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্রঃ সুফি ডেস্ক

গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (র) এর পত্র

বাংলাদেশের সুফিদের তালিকা

 



 

Contact Form

Name

Email *

Message *