Wednesday, December 31, 2014

শরীয়ত ও তরিকত

প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত ইহতে তরিকতকে এবং তরিকত ইহতে শরীয়তকে পৃথক জানাই পাপ এবং মারেফাত ব্যতীত কোনো এবাদতই হইতে পারে না । শরীয়ত দেহ,তরিকত তাহার প্রাণ। প্রাণ ব্যতীত দেহ যেমন অচল ও অকর্মণ্য,সেইরুপ তরিকত ব্যতীত শরীয়তও অচল,অসম্পূর্ণ ও প্রাণহীন মৃতদেহ মাত্র । মোটের উপর ইসলাম(অর্থাৎ আত্ম সমর্পণ),ইমান ও মারেফাতে এলাহি এই তিনটি মিলিয়া শরীয়ত গঠিত হইয়াছে। অর্থাৎ এই তিনটির সমষ্টিগত অস্তিত্ব বা ব্যবহার নাম শরীয়ত। সুতরাং উহাদের একটি বাদ পড়িয়া গেলেই শরীয়ত অপূর্ণ থাকিয়া যাইবে। ইসলাম ও ইমান লাভ করিবার জন্য মারেফাতে এলাহি হাসেল করাও ফরজ। অতএব ,আহলে মারেফাত না হইলে আহলে শরীয়ত হওয়া যায় না এবং যিনি আহলে শরীয়ত ,তিনিই আহলে মারেফাত “ অহাবীগণ আহলে মারেফাত নহে বলিয়া তাহারা শরীয়ত ইহতেও বঞ্চিত হইয়া থাকে ।মহব্বত ও আদবের অভাব বুদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ তত্বজ্ঞাণের অভাবে সন্দেহ ও অবিশ্বাসে আচ্ছন্ন হইয়া রসুল্লাল্লাহ(দঃ)-এর সহিত এবং তাঁহার প্রতিনিধিস্থানীয় আউলিয়াগণের সহিত দেয়াদবি করিবার দরুন অহাবীদের মন রহমতে এলাহির অভাবে মরিয়া গিয়াছে ।ঐ সকাল কাষ্ঠহৃদয় লোক হইতে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয় । অবশ্য সর্বসাধারণ আহলে শরীয়ত না হইলেও চলিতে পারে ।নেতার প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা রাখিয়া কাজ করিয়া গেলেই মুক্তি পাইতে পারিবে,কিন্তু চালক যদি প্রকৃত প্রস্তাবে আহলে শরীয়ত না হয় তাহা হইলে তাহার অনুসরণকারীগণ শুধু আনুষ্ঠানিক কাজ অন্ধের মতো করিয়া চলিলে লাভবান হইতে পারিবে না ।রসুলাল্লাহ(দঃ) এর সময়কার অনুসরণকারীদের কথা আলাদা ।তাঁহাদের তথ্য বুঝিবার কোনো প্রয়োজন ছিল না।মহানতম নেতার আদেশ পালন করাই ছিল তাহাদের জন্য যতেষ্ট,কারণ ,তিনি স্বয়ং ইসলাম । যাহার সঙ্গে যে মহব্বত রাখে তাহার সঙ্গে সে পরকালে মিলিত হইবার সুযোগ লাভ করিবে।ইহা কোরান হাদিসের একটি বিষেষ বক্তব্য ।পাপী তাপী সর্বসাধারণের শুধু ইহার সাহায্যে ক্রমোন্নতি লাভ করিবার আশা করিতে পারে নতুবা নিজে এবাদত করিয়া কোরান হাদিসের অনুমোদন লাভ করিবার মতো এবাদত লইয়া পরকালে যাইতে পারবে-এইরুপ আশা করা কঠিন। রসুল(আঃ) এর প্রতিনিধিস্থানীয় যতো অলিয়ে কামেল যুগে যুগে বিকশিত হইয়া আসিতেছেন তাহাদের সঙ্গে আনুগত্য ও প্রেমের সম্বন্ধ যাহারা রাখিবেন তাহারা সবাই নূরে মোহাম্মাদীর শাফায়াত লাভ করিবেন ।অহাবীরা সেই সুযোগ হইতে বঞ্চিত।তাহারা বলে -আমরা রসুলাল্লাহ(আঃ) এর সরাসরি অনুসরণ করিব।মধ্যস্থ কোনো লোকের অনুসরন আমরা করিব না । পরবর্তী লোকের জন্য হুজুর(আঃ) কে সরাসরি চেনা সহজ নহে এবং তাঁহার অনুসরণ করাও সহজ নহে । কোনো আহলুল্লাহ্র সংস্রব না রাখিয়া শুধু আপন এবাদতের দ্বারা মুক্তিলাভ করা লক্ষ লোকের মধ্যে একজনের সম্ভব হইতে পারে । সংসার জীবনে আমিত্বের বিস্তারিত জাল্কে সুটাইয়া একের দিকে সকল চিন্তাধারা নিবন্ধ করিয়া একের প্রতিষ্ঠা নিজ মনে নিবদ্ধ করিয়া রাখা সহজ বিষয় নহে ।সূক্ষা সত্যের পথে পা রাখা কাহারো পক্ষে এককভাবে মোটেই সহজ নহে ।অথচ কামেল ব্যক্তিগণ হইতে মানুষের মনকে সরাইয়া অহাবীগণ মানুষকে ফেলিয়া দেয় নিতান্ত একা ও অসহায় অবস্থায় ।বাহ্যিক এবাদত এবং আত্মগরিমার পাপ-পঙ্কিলে আবদ্ধ করে তাহাদের মনকে । কোনো মহামানবের ফয়েজ (আধ্যাত্মিক সাহায্যে ব্যতীত ক্ষমালাভ করা এবং জীবদ্দশায় আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ লাভ করা যায় না। এইদিকে আল্লাহ ছাড়া কাহারও দারস্থ হওয়া অহাবী মতে শেরেক ,অথচ নূরে মোহাম্মাদীর দ্বারস্থ না হইয়া আল্লাহর দ্বারস্থ হওয়াই যায় না । হুজুর করীম (সঃ) বলিয়াছেন “আউলিয়াগণ আমার জুব্বার আড়ালে ,আমি ব্যতীত অন্য কেহ তাহাদিগকে চিনিতে পারে না” অর্থঃআল্লাহ যখন যাঁহার নফসের মধ্যে নূরে মোহাম্মাদী প্রদান করেন(নূরে মোহাম্মাদী জাগ্রত ও বিকশিত করিয়া তুলেন)তখন সেই ব্যক্তি উহা দ্বারা আউলিয়াগণকে চিনিতে পারেন । হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ আজমেরী (রঃ) এইরুপ বলিয়াছেন ,যাহার পীর নাই তাহার জন্য রসুলের শাফায়াত নাই।যাহার জন্য রসুলল্লাহ(আঃ) নাই তাহার জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও মুক্তি নাই। যাহার পীর নাই শয়তানই তাহার পীর।

 মসজিদ দর্শন -সুফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী (র)।

No comments:

Contact Form

Name

Email *

Message *