Sunday, February 16, 2014

পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী- ১

গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ)
পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) ১লা রমজানুল মোবারক হিজরী ৪৭০ বা ৪৭১ সালে পারস্যের এক বিখ্যাত জনপদ ‘জিলানে’ এ জনপদে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা হযরত সায়েদ শেখ আবু সালেহ (রঃ) ছিলেন একজন কামেলদার সুফি এবং মাতা  সাইয়েদেনা ফাতেমা (র:)। তার পিতৃকুলের একাদশতম উর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন হযরত হাসান (র:) এবং তার মাতা সাইয়েদেনা ফাতেমা (রঃ) এর চৌদ্দতম উর্ধ্বতন পুর্বপুরুষ ছিলেন হযরত ইমাম হোসেইন (রঃ)।

বড় পীর যখন মাতৃগর্ভে  তার মাতা সাইয়্যেদেনা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রঃ) একদিন স্বপ্ন দেখেন জগতের আদি মাতা হজরত হাওয়া (আঃ) আনন্দের সাথে বলছেন- "ওহে ফাতেমা তুমি এই মাকলুকাতের ভাগ্যবতী মহিলা, তোমার গর্ভে যে সন্তান আছে, সে হবে আওলিয়াকুল শিরমনি গাউসুল আজম।”

 হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(রঃ) এর বয়স যখন মাত্র ৫ বৎসর তখনই তিনি পিতৃহীন হন।তার লালন-পালন ও পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের উপর। তার মা চরকায় সুতা কেটে জিবীকা নির্বাহ করতে শুরু করেন।মাতা পুত্রকে কখনও কখনও অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়।যেদিন ঘরে কিছু খাবার না থাকতো তখন মা বলতেন,”আজ আমরা আল্লাহপাকের মেহমান।”
 
পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) একদিন উদাস মনে নদীর পারে বসে ছিলেন। ঐ সময়  একটি আপেল ভেসে যাচ্ছিল,  তিনি ফল টি খেয়ে ফেলেন, খেয়ে ফেলার পর তার মনে হল সে যে ফল টি খেল তা কথা থেকে এসেছে, তার ফল টি খওয়া টি ঠিক হয়নি তাই তিনি স্রতের উল্টো দিকে হাটা শুরু করল ফলের মালিকের খুজে বের করার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে ফলের বাগানের মালিক কে খুজে পেল। সেই বাগানের মালিক ছিলেন
সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ সাউয়েমী (রঃ)। তিনি ছিলেন অনেক বড় মাপের সূফী। বড় পীর যখন তার সব কথা খুলে 
 বললেন এবং ফল টি খেয়ে ফেলার জন্য ক্ষমা চেলেন সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ সাউয়েমী (রঃ) বিস্মিত মনে মনে ভাবলেন এই যুবকের অন্তরে তো অনেক আল্লাহভীতি, একেতো হাত ছাড়া করা যায় না। তিনি বললেন, ‘আপেলেরতো অনেক মুল্য।কি এনেছ তার জন্য ?’ আবু সালেহ জবাব দিলেন,’আমার কাছেতো কোন টাকাপয়সা নেই’ তবে গায়ে খেটে মুল্য পরিশোধ করতে চাই।আপনি যতদিন খুশী গায়ে খাটিয়ে নিতে পারেন।’হজরত সাউয়েমী র: বললেন ওয়াদা করবার আগে ভাল করে ভেবে দেখ। আবু সালেহ বললেন আমি ওয়াদা পুর্ন করবো ইনশাআল্লাহ। সাউয়েমী (রঃ) বললেন তোমাকে পুরো এক বৎসর বাগানের দেখাশোনার কাজ করতে হবে উপরন্তু আমি যখন যে কাজের হুকুম দিব তাই করতে হবে। কোন কথা ছাড়াই সব শর্ত মেনে নিলেন আবু সালেহ।সময় শেষ হবার পর নুতন শর্ত যুক্ত করলেন সাউয়েমী র:।তিনি বললেন ‘আমার একটি অন্ধ,বধির ও বোবা কন্যা আছে তাকে তোমার বিয়ে করতে হবে’। তাতেও রাজী হলেন আবু সালেহ।বিয়ের পর বাসর ঘরে ঢুকেই তাজ্জব বনে গেলেন আবু সালেহ।তার নব বধুতো অপরুপা! অন্ধ,বধির বা বোবা কিছুই নন।পরদিন ব্যখ্যা দিলেন সাউয়েমী র:।আমার এই কন্যা কোনদিন ঘরের বাইরে যায়নি,বাইরের কোন লোকের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকায়নি এবং তার মুখে কখনও অশ্লীল বাক্য উচ্চারিত হয়নি।তাই তাকে আমি অন্ধ,বধির ও বোবা বলেছিলাম।


বাল্যবয়সেই পীড়নে পীর দস্তগির গাউসেল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রঃ) এর জীবনে বিভিন্ন আলৌকিক ঘটনাও ঘটতে শুরু করে।একবার সমবয়সী বালকদের সাথে খেলায় যোগ দেয়ার ইচ্ছা করলে গায়েবী আওয়াজ এলো,”হে বরকতময় সত্তা ,আমারকাছে এসো!”কথা শোনা গেলেও কন্ঠটি কার বা কোথ্থেকে এলো কিছুই তিনি বুঝতে পারলেন না।তাছারা কোন লোকও তিনি সেখানে দেখতে পেলেন না।তাই ভয়ে দৌড়ে তিনি ময়ের কাছে চলে এলেন। এরকম আরো বহুবার হয়েছে।

 একবার নিদ্রাকাতর অবস্হায় সুখময় নিদ্রা যাচ্ছিলেন।এমন সময় ঘুমের ঘরে তিনি স্বপ্নে দেখিলেন-একজন
উজ্জল জ্যোতিবিশিষ্ট স্বর্গীয় ফিরেশতা তাহার শিয়রের নিকট এসে অত্যন্ত কোমল স্বরে বলিতেছেন- ”হে আল্লাহর মনোনিত আব্দুল কাদির!উঠ,আর নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থেক না।সুখ শয্যার কোলে ঢলে পড়বার জন্য এই পৃথিবিতে তোমার আগমন ঘটেনি।তোমার কর্তব্য ও দায়িত্ব সুদুরপ্রসারী! মোহগ্রস্হ,নিদ্রাচ্ছন্ন জনগনকে নিদ্রার মোহ থেকে মুক্ত করিবার জন্যই তোমার আগমন ঘটেছে।



সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ই ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) (১২৩৮ - ১৩২৫ এপ্রিল ৩) সংক্ষিপ্ত জীবনী







No comments:

Contact Form

Name

Email *

Message *